ভোরের আলো ফুটছে। মোবাইল ফোনে টাইম দেখে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ি। বাসা
থেকে কয়েক কদম পথ পেরিয়ে বাসে উঠে পড়ি। গন্তব্য মায়াদ্বীপ। সকাল সাতটার
মধ্যেই গুলিস্তান ভাসানী স্টেডিয়াম গেটের সামনে হাজির হই। সাড়ে আটটার
মধ্যে দলনেতা শাহীন আহমেদ ভাইসহ বাকি সদস্যরা এসে হাজির হন। কিছুক্ষণ পরেই
বাস চলে আসে। এক এক করে দলের সবাই বাসে উঠে পড়ি। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। তাই
বাস চলতে থাকে দ্রুত। সকাল নয়টা চল্লিশ মিনিটের দিকে আমরা নারায়ণগঞ্জের
সোনারগাঁও নেমে পড়ি। সেখান থেকে আবার অটোবাইকে রওনা দিয়ে বৈদ্যের বাজার
গিয়ে নামি। সেখানে আগেই নৌকা ঠিক করা ছিলো। পাশের এক হোটেল থেকে সকালের
নাশতা সেরে নেই। নাশতা খাওয়া শেষ হলো, কিন্তু চা পান না করলে যেন দিন শুরু
হচ্ছে না। তাই পাশের চায়ের দোকান থেকে গরুর দুধের সুস্বাদু চাও খেয়ে
নিলাম। এরই মধ্যে ভ্রমণের কো-অর্ডিনেটর তরুণ যুবক সুহেল রানা। আরো দুজন
সফরসঙ্গীর সহায়তায় প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাশের দোকানগুলো
থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন। দলনেতা শাহীন ভাই সবাইকে নৌকায় সামনে চলে
যাওয়ার জন্য তাগিদ দিলেন।
মেঘনার বুকে ভেসে
ইঞ্জিন নৌকার ভটভট শব্দে আমরা যেতে থাকি প্রমত্তা মেঘনার বুক বেয়ে।
নৌকার ভেতরে চলে জম্পেশ আড্ডা। সেই সঙ্গে চকলেট, বাদাম, তরমুজ ও সঙ্গে জুস।
নৌকার গলুইয়ে বসে চিত্রশিল্পী ফরিদী নুমান ভাই ক্যামেরা নিয়ে আশপাশের পাখি
ও প্রকৃতির ছবি তুলতে ব্যস্ত। চোখ মেলে দেখি মেঘনার বুকে ডানা মেলে উড়ছে
কয়েকটি চিল। নৌকাতে বসে কাঁত হয়ে নিতে থাকি স্বচ্ছ জলরাশির স্পর্শ। প্রায়
আধঘণ্টা পর একটা চরে নেমে পড়ি। নৌকায় থাকা সবাই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নেমে পড়ি।
বিস্তীর্ণ বিশাল এই চরে কোথাও কোনো জনমানুষের দেখা নেই। চারিদিকে গরু আর
গরু। তারা যে যার মতো আপন মনে ঘাস খাচ্ছে। চারপাশজুড়ে চর থাকার কারণে চুরি
হয়ে যাওয়ার ভয় নেই, তাই রাখাল চলে গেছে তার নির্দিষ্ট আশ্রয়ে। সমস্ত চরজুড়ে
ডাকছে ছোট ছোট বাবুই পাখির ঝাঁক। আমাদের দলের আলোকচিত্রী নুমান
বিভিন্নভাবে এই পাখিদের ছবি তুলতে লাগলেন। দলের অন্যরাও সবাই ঘুরে ঘুরে
পুরো চর প্রদক্ষিণ করে নিই একবার। তখনো পর্যন্ত ফরিদী ভাই তার চোঙ্গা
সাইজের জুম লেন্স লাগিয়ে একের পর ছবি তুলে যাচ্ছেন। দ্বীপ প্রদক্ষিণ শেষ
করে আবার আমরা নৌকায় উঠে রওনা দেই মূল গন্তব্যে। চলতে থাকে নৌকা, সেই সঙ্গে
ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী নুমান ভাই ভেতরে বসে ক্যামেরায় পাখির ছবিগুলোর ফোকাস
চেক করছিলেন। তাকে চারপাশে ঘিরে সবাই বসে আছে। মায়াদ্বীপ পৌঁছাতে আমাদের
আর বেশি সময় লাগেনি। দুপুর সাড়ে বারোটার মধ্যে পৌঁছে যাই। গন্তব্য এখানেই।
তাই বাকি দিন এখানে কাটানোর জন্য আমরা প্রস্তুত হতে থাকি। মেঘলা আবহাওয়া
আর তার সঙ্গে মৃদু বাতাস। ছায়া মাখা মায়াদ্বীপ যেন একটা মায়াপুরীতে পরিণত
হয়েছে। দলনেতা শাহীন ভাই খেলাধুলার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকা থেকে
সকলকে নামতে নির্দেশ দিলেন। প্রথমেই আমরা আয়োজন করি স্থানীয় শিশু-কিশোরদের
অংশগ্রহণে দৌড় প্রতিযোগিতা। মোরগ লড়াই এবং শেষে বিজয়ীদের মধ্যে শুভেচ্ছা
পুরস্কার বিতরণী। এসব পুরস্কারের মধ্যে ছিল নতুন টাকার নোট, খাতা-কলম এবং
সবার জন্য সান্তনা পুরস্কার চকোলেট।
পল্লীভ্রমণ
খেলাধুলা শেষ করে সেখানকার পুরো গ্রামটি ঘুরে দেকি। একটি বাড়িতে দুপুরে
খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে আবার বেরিয়ে পড়ি গ্রামের পথে। সেই সঙ্গে ফুরিয়ে
যাওয়া পানির বোতলগুলো টিউবওয়েল থেকে আবার রিচার্জ করে নিই। বিচ্ছিন্ন এই
দ্বীপের সংগ্রামী মানুষগুলো তাদের জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়ে সমৃদ্ধ
করার চেষ্টা করছে পুরো মায়াদ্বীপ। গ্রামে টিউবওয়েল, ফল ফসলের গাছ,
সবজিবাগান, গবাদিপশু, মসজিদ, প্রাথমিক স্কুল এইসব স্থাপনায় সাজিয়ে নিতে
চেষ্টা করছে তারা প্রতিনিয়ত। এতকিছুর পরেও এই এলাকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা
যেন প্রতিদিন সংগ্রাম। পুরো দ্বীপ ঘুরে একটি নারকেল গাছ চোখে পড়ে। তাতে
বেশ কিছু বাবুই পাখি বাসা তৈরি করেছে। ঠিক যেন মায়াদ্বীপের সংগ্রামী
মানুষগুলোর মতোই তিলে তিলে গড়া বেঁচে থাকার আশ্রয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
বছরের প্রথম দিনটি ফুরিয়ে যেতে থাকে। আর আমরাও মায়াদ্বীপের মায়া ত্যাগ করে
ঢাকার উদ্দেশ্যে ফের পথ ধরি।
যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সকাল থেকে রাত
পর্যন্ত কয়েক মিনিট পরপর বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায়। বাসে গিয়ে সোজা নামতে হবে
সোনারগাঁওয়ে। তারপর সেখান থেকে ইজি বাইকে বৈদ্যের বাজার নেমে নৌকা ভাড়া করে
যেতে হবে। সারাদিনের জন্য নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত। বন্দর
এলাকা বৈদ্যের বাজারে প্রয়োজনীয় সকল কিছু কিনতে পাওয়া যায়।
Tuesday, April 16, 2019
মায়াদ্বীপ (মায়া চর) যেভাবে যাবেন - বারদী_ইউনিয়ন, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment