Breaking

Showing posts with label Tourism Venue Information. Show all posts
Showing posts with label Tourism Venue Information. Show all posts

Wednesday, August 14, 2019

August 14, 2019

বাশঁখালী সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম ট্যুর প্লান যাতায়াত ও আনুসাংগিক খরচাদি

বাশঁখালী সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম ট্যুর প্লান যাতায়াত ও আনুসাংগিক খরচাদি 

চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪০ কিমি দক্ষিণে বাঁশখালীর উপকূল জুড়ে দীর্ঘ ৩৭ কিলোমিটার বিস্তৃত অভাবনীয় সৌন্দর্যের ভরপুর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বাশঁখালী সমুদ্র সৈকত। তীড়ে ভিড়তে চোখে পড়বে সাগরদিঘীর ন্যায় বিশাল বিশাল মাছের ঘের, বিশাল সমুদ্রের দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ জলরাশি, বালুকাময় মরুপথ, ঝাউবনের ছায়াঘন মনকাড়া নিবিড় পরিবেশ, মাঝে সৈকতজুড়ে সবুজ গালিচার বিস্তৃত প্রান্তর, সাগরের উত্তাল গর্জন, সুসজ্জিত বেড়িবাঁধ, সাঙ্গু নদীর মোহনা, সাগর জলে ভেসে ভেড়ানো মাছ ধরার ট্রলার/নৌকা, জেলেদের জালে ধরা পড়া টাটকা সমুদ্রিক মাছ ও রূপালী ইলিশ।

দেখে মিলে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের ন্যায় কেওড়া ও শ্বাসমূলের, আর সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেন অপার্থিব মনে হয়। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে তুলেছেন। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিতে বিরল। বেলাভুমিতে পদার্পন করতে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানাতে ভুলবে না লাল কাঁকড়ার " বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত"

ঝাউবাগানের শাঁ শাঁ দক্ষিণা হাওয়ায় সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সারা বিকেল কাটিয়ে দিতে পারেন।বালুকাবেলায় একেঁ দিতে পারেন একটি বিকেল কাটানোর শিল্পিত চিহ্ন।




প্রেমাশিয়া_কদমরসূল_খানখানাবাদ_বাহারছড়া_রত্নপুর_কাথারিয়া_সরল_গন্ডামারা সহ সাত-আটটি পয়েন্ট সেজে আছে আপন আপন রূপ মাধুর্যে।

বাঁশখালী চা-বাগান, চট্টগ্রাম।
শত বছরের ঐতিহ্যের পরিক্রমায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জায়গা জুড়ে স্তরে স্তরে সাজানো বাশঁখালী চা-বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়ী টিলা এবং পাহাড়ঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। বৈচিত্র্যময় পাহাড়ী টিলা গুলো দূর থেকে দেখলে অনেকটা 'সবুজ টুপি' মত। আর নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা। পাহাড়ের কূল বেয়ে আকাবাঁকা মেঠোপথ। উত্তরে আঁকাবাঁকা পথে কলকল রবে বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী।

এই চা-বাগান বাংলাদেশের অন্যসব চা-বাগান থেকে ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে আর তা হল বন্যহাতি। বাংলাদেশে শুধু এই চা বাগানের আশে পাশেই হাতির দেখা মিলে। শুধু হাতি নয় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হাতির পালের সাথেও দেখা হয়ে যেতে পারে ।প্রায় প্রতিদিন বিকালে-সন্ধ্যায়-রাতে বন্যহাতির দল হানা দেয় এই বাগান ও আশে পাশের এলাকাতে। কিন্তু কিছু বিশেষ স্থানে প্রায়ই হাতির আনাগোনা থাকে। আর হুট করে ভাগ্যগুনে যদি হাতির পালের দেখা হয়ে যাই সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক ।

৩ লক্ষ ২৫ হাজার কেজি পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলা এই চা-বাগানে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করণ করার দৃশ্যটিও অনুমতি নেয়া সাপেক্ষে দেখতে পারেন ভ্রমনকারীরা। ক্লোন চায়ের জন্যে এই বাগানে উৎপাদিত চায়ের খ্যাতি রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অসম্ভব সুন্দর এই ক্লোন চা বাগানটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

চা বাগানটি প্রতিষ্টার ইতিবৃক্তঃ
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১২ সালে তৎকালীন এই অঞ্চলের জমিদার রায় বাহাদুর চা বাগানটি গোড়াপত্তন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্টপতি ৯৮/৭২নং ধারা মোতাবেক খাসভুক্ত করে এই চা-বাগানকে উজ্জীবিত করার জন্য জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম চা বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়া দেয়।সে অনুসারে ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম চা বোর্ড প্রথম আবাদ শুরু করে। বর্তমানে সিটি গ্রুপের নিবিড় তক্তাবধানে এই চা বাগানটি পরিচালিত হচ্ছে ।

ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে যেকোন পথে চট্টগ্রাম হয়ে বাঁশখালী যাওয়া যায়।বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও শাহ আমানত সেতু (স্থানীয় ভাষার নতুন ব্রীজ) থেকে বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিস ও সুপার সার্ভিস নামে দুটি বাস ছেড়ে যাই প্রতি ২০ মিনিট পর পর। মাত্র ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় বাঁশখালী ঘন্টা দেড়েকের দুরত্ব। তাছাড়া নতুন ব্রীজ থেকে সিএনজি যোগে সরাসরি সাঙ্গু নদী পার হয়ে বাশঁখালীর চানঁপুরে। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকা। চানঁপুর থেকে চা-বাগান, ভাড়া জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকা। চা-বাগান থেকে পুনরায় চাঁনপুর এসে গুনাগরি/কালিপুর ছলিয়ার বাপের পুল/বৈলছড়ি হয়ে সী-বীচে। বৈলছড়ি হয়ে কাথরিয়া পয়েন্ট,ছলিয়ার বাপের পুল বাহারছড়া পয়েন্ট আর গুনাগরি হয়ে খানখানাবাদ ও কদমরসূল পয়েন্ট।

মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন সারাদিনের চুক্তিতে। অবকাঠামো সেভাবে গড়ে উঠেনি। দুই-একটা রিসোর্ট নিমার্ণাধীন। তবে সব স্পট গুলো প্রায় কাছাকাছি, এক দিনেই ঘুরে ব্যাক করা যাবে।

বিঃ দ্রঃ- সঙ্গে যা নিয়ে যাবেন তা ফিরিয়ে আনতে ভুলবেন না। যত্রতত্র পলিথিন, খাবার প্যাকেট ও সিগারেটের ফিল্টার ফেলবেন না। আমরা যেমন দেখছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও যেন তেমনই উপস্থাপন করতে পারি। আসুন চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখি, নির্মল দৃশ্যগুলো মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ুক।
August 14, 2019

Bangabandhu Safari park, Gazipur ট্যুর প্লান যাতায়াত ও আনুসাংগিক খরচাদি

Bangabandhu Safari park, Gazipur ট্যুর প্লান যাতায়াত ও আনুসাংগিক খরচাদি

ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা - ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্কটির অবস্থান।

ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতি-বনশ্রি বাস মাওনা যায়। এই বাসে করে বাঘের বাজার নামতে হবে। ভাড়া ৭০ টাকা। এছাড়াও মহাখালি থেকেও এই বাসে উঠা যাবে, ভাড়া ৬০ টাকা নিবে। অথবা সায়েদাবাদ থেকে বলাকা, গুলিস্তান থেকে গাজিপুরের যে কোন গাড়ি ও যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, রামপুরা থেকে সালসাবিল বা অনাবিল বা অন্য যে কোন বাসে গাজিপুর চৌরাস্তা গিয়ে, তারপর লেগুনা করেও যাওয়া যায়। চৌরাস্তা থেকে লেগুনা ভাড়া ৩০ টাকা।

এছাড়াও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে গাজিপুর নেমে লেগুনা করেও যাওয়া যাবে বাঘের বাজার। বাঘের বাজার থেকে ইজি বাইক/ অটো রিক্সা/ সিএনজি করে ৩ কিলো পশ্চিমে পার্কের ফটক পর্যন্ত যেতে ভাড়া নিবে জনপ্রতি 40টাকা।

দর্শনীয় স্থান 



সাফারি পার্কে আছে জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সাম্বার, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বানর, হনুমান, ভল্লুক, গয়াল, কুমির ও বিচিত্র পাখী। এই পার্ক জুড়ে রয়েছে নানা দর্শনীয় পশু-পাখি ও ভাঙ্কর্য। পার্কের প্রথমে ঢুকেই হাতের ডানে পুরো পার্কের মানচিত্র পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে ঝুলন্ত ব্রিজ ও হাতির উপরে চড়ার সুযোগ। তবে পার্কের বেশিরভাগ দর্শনীয় জিনিষগুলো টিকেটের বিনিময়ে দেখতে হবে।

এই পার্কটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত:

বঙ্গবন্ধু চত্বর
কোর সাফারি: সাফারি পার্কের মূল আকর্ষণ এই কোর সাফারি। যেখানে জনপ্রতি ১০০ টাকা টিকেটের বিনিময়ে বাসে করে ঘুরে বেড়াবেন জঙ্গলে। আর বাঘ, ভাল্লুক, সিং, হরিন, জিরাফ, জেব্রা সহ বিভিন্ন প্রানি দেখবেন উন্মুক্ত। আপনার গাড়ির কাছে এসে তারা খেলা করছে।

সাফারি কিংডম: এর আওতায় রয়েছে বাকি অন্যন্য আকর্ষনিয় সব কিছু। যেমন-

প্রকৃতি বিক্ষন কেন্দ্র
প্যারট এভিয়ারি
ক্রাউন ফিজেন্ট এভিয়ারি
ম্যাকাউ ল্যান্ড
ছোট পাখিশালা
ফেন্সি ডাক গার্ডেন
কুমির পার্ক
প্রজাপ্রতি বাগান
ইমু/অস্ট্রিচ গার্ডেন
কচ্ছপ ও কাছিম প্রজনন কেন্দ্র
লিজার্ড পার্ক
ভালচার হাউজ
হাতি শালা
মেরিন একুরিয়াম
অর্কিড হাউজ
পেলিকন আইল্যন্ড
ঝুলন্ত ব্রিজ
এগ ওয়ার্ল্ড
ধনেশ এভিয়ারি
প্রাইমেট হাউজ
লেক জোন
বোটিং লেক
লামচিতার ঘর
ক্যঙ্গারু এভিয়ারি
প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘর
শিশু পার্ক
জীব বৈচিত্র্য পার্ক
বিস্তৃত এশীয় পার্ক

সাফারী পার্কের ভেতরে খাবারের দাম অনেক বেশী (২২০-২৫০ টাকা প্যাকেট) তাই বাইরে থেকেই খেয়ে ঢোকা ভালো।

পার্কে প্রবেশ মুল্য ১০০ টাকা। সাফারী জিপের টিকিট ১০০ টাকা। অন্যান্য সব ক'টা খাচা ঘুরে দেখতে প্রতিজনের ১০০-১২০ টাকার একটি কম্বো টিকিট কেটে নিবেন। আর প্রজাপতি ঘর+জাদুঘরের টিকিট ২০ টাকা।

বিঃদ্রঃ-
*সঙ্গে করে ছাতা নিবেন অবশ্যই। (রোদ+ বৃষ্টি)
*প্রজাপতি খাচা+জাদুঘরে দেখার মত তেমন কিছু নেই।
*ভেতরে কোন হকার পাবেন না।
* ঘুরতে গিয়ে ময়লা ফেলবেন না, ময়লা ফেলার ডাস্টবিন আছে অনেক, সেখানে ফেলবেন
*এটি যেহেতু ডে ট্যুর, দিনে গিয়ে দিনে ফিরবেন সুতরাং চেস্টা করবেন ভোর ভোর রওয়ানা দিতে।
হ্যাপি ট্রাভেলিং 🙂🙂

Tuesday, August 13, 2019

August 13, 2019

সাজেক ভ্রমন এর বিস্তারিত সাথে খরচের হিসাব ও কিছু গুরুত্ব পূর্ণ মোবাইল নাম্বার

সাজেক ভ্রমন এর বিস্তারিত সাথে খরচের হিসাব ও কিছু গুরুত্ব পূর্ণ মোবাইল নাম্বার

সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley), বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসাবে খ্যাত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিলোমিটার। সাজেক যেতে হলে অবশ্যই বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে।

কি দেখবেন

চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সাজেক এমনই আশ্চর্য্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্যে আপনি হতে পারেন চমৎকৃত। কখনো বা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হটাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা।
কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। আর সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম কংলক পাড়া লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। কংলাক পাড়া থেকেই কর্ণফুলী নদী উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দুই ঘন্টা ট্রেকিং করে কমলক ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন। সুন্দর এই ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামেও পরিচিত।

দিন কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত, সময় গড়ায় তবু সাজেক পুরাতন হয় না। সাজেকে গেলে অবশ্যই সকালে ভোরের সময়টা মিস করবেন না। মেঘের খেলা আর সূর্যোদয়ের আলোর মেলা এই সময়েই বসে। এই জন্যে আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। বিকেলের কোন উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্তের রঙ্গিন রূপ আপনাকে বিমোহিত করবেই। আর সন্ধ্যার পর আকাশের কোটি কোটি তারার মেলা, আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দিবে নিমিষেই। আকাশ পরিস্কার থাকলে দেখা পাবেন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের। ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ ও আদিবাসীদের জীবন যাপন। সহজ সরল এই সব মানুষের সান্নিধ্য আপনার ভাল লাগবে।

আর হাতে সময় থাকলে সাজেক ভ্যালি থেকে ফেরার পথে ঢু মেরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার থেকে।

সাজেক এর সূর্যোদয়


কখন যাবেন

সাজেকের রূপের আসলে তুলনা হয় না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। বছরের যে কোন সময় আপনি সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। তবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।

সাজেক যাবার উপায়

সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। তাই প্রথমেই আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে সৌদিয়া, শ্যামলি, শান্তি পরিবহন, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি বাসে করে যেতে পারবেন। নন এসি এইসব বাস ভাড়া ৫২০ টাকা। এসি বাসে যেতে চাইলে বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনে ৭০০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন। এছাড়া শান্তি পরিবহন বাস সরাসরি দীঘিনালা যায়, ভাড়া ৫৮০ টাকা। ঢাকায় গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এইসব পরিবহণের কাউন্টার। ছুটির দিন গুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো নয়তো পড়ে টিকেট পেতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি/চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে ভাড়া নিবে ৮,০০০-১০,০০০ টাকা। এক গাড়িতে করে ১২-১৫ জন যেতে পারবেন। তবে লোক কম থাকলে অন্য কোন ছোট গ্রুপের সাথে কথা বলে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। তবে পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই ভালো।

এছাড়া আপনি যদি একা বা ২-৩ জন হন তাহলে খাগড়াছড়ি শাপলা চত্ত্বর থেকে অনেক গ্রুপ পাওয়া যায়, সেখানে অন্য গ্রুপের সাথে কথা বলে তাদের সাথে শেয়ার করে যেতে পারবেন অথবা জিপ সমিতির অফিসে গেলে ওরা ম্যানেজ করে দিবে অন্য কোন গ্রুপের সাথে।

এছাড়া খাগড়াছড়ি থেকে দিঘীনালায় গিয়ে সেখান থেকে সাজেক যেতে পারবেন। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। খগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা বাস ভাড়া ৪৫ টাকা, মোটর সাইকেল জনপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। আবার চাইলে মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে সাজেক ঘুরে আসা যায়। যে কোন গাড়ি ঠিক করার আগে কি দেখবেন, কি করবেন এইসব ভালো মত কথা বলে নিবেন।

তবে আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, যেভাবেই যান আপনাকে দিঘীনালায় ১০টার আগেই পৌছাতে হবে। দিঘীনালা থেকে বাকি রাস্তা নিরাপত্তার জন্যে আপনাকে সেনাবাহীনির এসকোর্টে যেতে হবে। সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিনে দুইবার পাওয়া যায়। সকাল ১০ টায় একবার, আবার বিকেল বেলায়। সকালের এসকোর্ট মিস করলে আপনাকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, বিকেলের টা মিস করলে আপনাকে পরেরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এসকোর্ট ছাড়া যাবার অনুমতি পাবেন না। দিঘীনালা পৌঁছে হাতে সময় থাকলে হাজাছড়া ঝর্ণা ঘুরে দেখে আসতে পারবেন।
দিঘীনালা থেকে যাবার পথে বাগাইহাট, মাচালং বাজার, তারপর রুইলুই পাড়া হয়ে পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন ঘন্টা। এই সময় আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলার সময়টুকু আপনার জন্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চারদিকে সারি সারি পাহাড় আর সবুজের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের সব ক্লান্তি।


চট্রগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণ : চট্রগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি বা দিঘীনালা হয়ে সাজেক যেতে পারবেন। চট্রগ্রামের কদমতলী থেকে বিআরটিসি এসি বাস সারাদিনে ৪টি বাস চলাচল করে, ভাড়া ২০০টাকা । এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘণ্টা পর পর শান্তি পরিবহনের (ভাড়া ১৯০টাকা) বাস চলাচল করে। চট্রগ্রাম থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ : রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথ এবং সড়কপথ উভয়ভাবেই বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে যেতে আর সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা। রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ৮ টা ৩০ ঘটিকার মধ্যে বাস ছাড়ে, জনপ্রতি ভাড়া নেয় ২০০ টাকা। সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব। বাঘাইছড়ি থেকে জীপ (চাদেঁর গাড়ি) অথবা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্যালীতে পৌঁছানো যায় এতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০০/-টাকা।

কোথায় থাকবেন

সাজেকে থাকার জন্যে অনেক ৪০ এর অধিক রিসোর্ট ও আদিবাসী কটেজ আছে। এক রাতের জন্যে জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পরবে। ছুটির দিনে যেতে চাইলে আগে মাসখানেক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো, নয়তো ভালো রুম পাবার নিশ্চিয়তা কম। আর কম দামে থাকতে চাইলে আদিবাসী কটেজ গুলোতে থাকতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নতুন নতুন অনেক কটেজ হয়েছে। সাজেকের সব কটেজ থেকেই মোটামুটি সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়।

সাজেকের রিসোর্ট ও কটেজ

সাজেক রিসোর্ট (Sajek Resort) : বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট সাজেক রিসোর্ট। এই আর নন এসি রুম গুলোর ভাড়া ১০,০০০ – ১৫,০০০ টাকা। আছে খাবারে ব্যবস্থা। সেনাবাহিনিতে কর্মরত বা প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে ডিসকাউন্ট রয়েছে। যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারেঃ 01859-025694 / 01847-070395 / 01769-302370

রুন্ময় রিসোর্ট (Runmoy Resort) : মোট ৫ টি রুম আছে। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। নিচ তলার রুম ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। যোগাযোগ: 0186547688

মেঘ মাচাং (Megh Machang) : সুন্দর ভিউ ও তুলনামূলক কম খরচে থাকার জন্যে মেঘ মাচাং রিসোর্ট অনেকের পছন্দ। আছে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। মেঘ মাচাং-এ পাঁচটি কটেজ আছে । ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01822-168877।

জুমঘর ইকো রিসোর্ট (Jumghor Eco Resort) : থাকার জন্যে কাপল রুম এবং শেয়ার রুম দুটাই আছে। কটেজ প্রতি ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01884-208060, ফেসবুক পেইজ।

লুসাই কটেজ (TGB Lushai Cottage) : কাপল রুম, ডাবল বেড সহ আছে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। সুন্দর ডেকোরেশন ও ভালো ল্যান্ডস্কেপিক ভিউয়ের এই কটেজের রুমের ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01634-198005, ফেসবুক পেইজ।

মেঘ পুঞ্জি রিসোর্ট (Meghpunji Resort) : সুন্দর ইকো ডেকোরেশনের ও আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ সহ মেঘপুঞ্জিতে আছে ৪টি কটেজ, প্রতিটিতে ৩-৪ জন থাকা যাবে। ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01815-761065, ফেসবুক পেইজ।

রিসোর্ট রুংরাং (Resort Rungrang) : রুংরাং রিসোর্টে আছে ৬টি ডাবল এবং ৪টি কাপল রুম। ভাড়া ডাবল বেড – ২৫০০ টাকা, কাপল- .২০০০ টাকা। উইক ডে তে রুম ট্যারিফের উপর ২০% ডিসকাউন্ট। যোগাযোগঃ 01884-710723, 01869-649817, ফেসবুক পেইজ।

আলো রিসোর্ট (Alo Resort) : সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়ায়। ৬ টি রুমের মধ্যে ডাবল রুম ৪ টি (২টি বেড)। ভাড়া ৮০০-১৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01841-000645, ফেসবুক পেইজ।

আদিবাসী ঘর: এ ছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে আদিবাসিদের ঘরেও থাকতে পারবেন। জনপ্রতি ১৫০-৩০০ টাকায় থাকা যাবে। ফ্যামিলি বা কাপল থাকার জন্যে আদর্শ না হলেও বন্ধু বান্ধব মিলে একসাথে থাকা যাবে।


সাজেক এর খাওয়া দাওয়া

সব রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা আছে তাই আগেই রিসোর্টগুলোতে বলে রাখলে পছন্দমত রান্না করে দিবে সেক্ষেত্রে প্রতিবেলা প্রতিজন ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে আর মেনু হিসেবে পাবেন ভাত আলুভর্তা, মুরগীর মাংস ইত্যাদি। চাইলে রাতে বার বি কিউও করতে পারবেন। এছাড়া আদিবাসী ঘরেও খাওয়া যায়, আগে থেকেই বলে রাখতে হবে কি খাবেন, তাহলে রান্না করে দিবে। সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাবেন চেখে দেখতে ভুল করবেন না।

সাজেক ভ্রমণ টিপস
 
সাজেকে বিদুৎ নেই, সোলার ব্যবস্থা থাকলেও চার্জ হতে বেশি সময় লাগে আর সহজলভ্যও নয়। সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে পারেন।
সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক এর নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।
সাজেক যাবার পথ অনেক আঁকাবাঁকা ও উঁচু নিচু, তাই এই পথ বিপদজনক। জীপের ছাঁদে ভ্রমনে সতর্ক থাকুন।

সাজেক যেতে গাইডের প্রয়োজন হয় না।

আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিয়ে নিন। অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না।
আদিবাসী মানুষজন সহজ সরল তাদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করুন ও তাদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান।
ছুটির দিনে গেলে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই (মাস খানেক) রুম বুকিং দিয়ে রাখুন।
যাবার পথে কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প আছে। সেখানে ভ্রমণকারী সদস্যদের কিছু তথ্য জমা দিতে হয়।
August 13, 2019

সিলেট ট্যুর প্লান যাতায়াত ও আনুসাংগিক খরচাদি :

সিলেট ট্যুর প্লান যাতায়াত ও আনুসাংগিক খরচাদি :




সিলেট বাসস্ট্যান্ড - পানসী : জন প্রতি ২০ টাকা

পানসী - চৌরঙি ঘাট - হাদার ঘাট - থাকার হোটেল (লেগুনা) : ২৫০০

চৌরঙির ঘাট টু রাতারগুল ( নৌকা) : ৭৫০

হাদারঘাট - বিছানাকান্দি - হাদারঘাট (ট্রলার) : ১২৫০

থাকার হোটেল - পানসী - লালখাল - তামাবিল - জাফলং - আগুন পাহাড় - শাহজালাল মাজার (লেগুনা) : ৩০০০
  বিছানাকান্দি

লালখাল ১ ঘন্টা ট্রলার রিজার্ভ : ৬০০

জাফলং নদী পারাপার ( আসাযাওয়া) : ২০*২ = ৪০

পানসী থেকে ক্বিন ব্রিজ এর নিচে সিএনজি : ১০ টাকা

টিপস :
মাজার গেটে হোটেল ভাড়া বেশি তাই লাল বাজার / বন্দর গেটে হোটেল নিতে হবে তবে দিনে ঘুড়ে রাতে হোটেল নিলে সবথেকে বেস্ট হবে

রাতের গাড়িতে ঢাকা টু সিলেট অথবা সিলেট টু ঢাকা

রাতারগুল যাওয়ার সময় চৌরঙির ঘার ব্যাবহার করা এতে নৌকা প্রতি ৭৫০ টাকা পরবে

প্রথমদিন রাতারগুল ও বিছানাকান্দি এবং ২য় দিন জাফলং ও লালখাল যাওয়া বুদ্ধিমানের

Tuesday, April 16, 2019

April 16, 2019

মায়াদ্বীপ (মায়া চর) যেভাবে যাবেন - বারদী_ইউনিয়ন, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ

ভোরের আলো ফুটছে। মোবাইল ফোনে টাইম দেখে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ি। বাসা থেকে কয়েক কদম পথ পেরিয়ে বাসে উঠে পড়ি। গন্তব্য মায়াদ্বীপ। সকাল সাতটার মধ্যেই গুলিস্তান ভাসানী স্টেডিয়াম গেটের সামনে হাজির হই।  সাড়ে আটটার মধ্যে দলনেতা শাহীন আহমেদ ভাইসহ বাকি সদস্যরা এসে হাজির হন। কিছুক্ষণ পরেই বাস চলে আসে। এক এক করে দলের সবাই বাসে উঠে পড়ি। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। তাই বাস চলতে থাকে দ্রুত। সকাল নয়টা চল্লিশ মিনিটের দিকে আমরা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও নেমে পড়ি। সেখান থেকে আবার অটোবাইকে রওনা দিয়ে বৈদ্যের বাজার গিয়ে নামি। সেখানে আগেই নৌকা ঠিক করা ছিলো। পাশের এক হোটেল থেকে সকালের নাশতা সেরে নেই। নাশতা খাওয়া শেষ হলো, কিন্তু চা পান না করলে যেন দিন শুরু হচ্ছে না। তাই পাশের চায়ের দোকান থেকে গরুর দুধের সুস্বাদু  চাও খেয়ে নিলাম। এরই মধ্যে ভ্রমণের কো-অর্ডিনেটর তরুণ যুবক সুহেল রানা। আরো দুজন সফরসঙ্গীর সহায়তায় প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাশের দোকানগুলো থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন। দলনেতা শাহীন ভাই সবাইকে নৌকায় সামনে চলে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিলেন।




মেঘনার বুকে ভেসে
ইঞ্জিন নৌকার ভটভট শব্দে আমরা যেতে থাকি প্রমত্তা মেঘনার বুক বেয়ে। নৌকার ভেতরে চলে জম্পেশ আড্ডা। সেই সঙ্গে চকলেট, বাদাম, তরমুজ ও সঙ্গে জুস। নৌকার গলুইয়ে বসে চিত্রশিল্পী ফরিদী নুমান ভাই ক্যামেরা নিয়ে আশপাশের পাখি ও প্রকৃতির ছবি তুলতে ব্যস্ত। চোখ মেলে দেখি মেঘনার বুকে ডানা মেলে উড়ছে কয়েকটি চিল। নৌকাতে বসে কাঁত হয়ে নিতে থাকি স্বচ্ছ জলরাশির স্পর্শ। প্রায় আধঘণ্টা পর একটা চরে নেমে পড়ি। নৌকায় থাকা সবাই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নেমে পড়ি। বিস্তীর্ণ বিশাল এই চরে কোথাও কোনো জনমানুষের দেখা নেই। চারিদিকে গরু আর গরু। তারা যে যার মতো আপন মনে ঘাস খাচ্ছে। চারপাশজুড়ে চর থাকার কারণে চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় নেই, তাই রাখাল চলে গেছে তার নির্দিষ্ট আশ্রয়ে। সমস্ত চরজুড়ে ডাকছে ছোট ছোট বাবুই পাখির ঝাঁক। আমাদের দলের আলোকচিত্রী নুমান বিভিন্নভাবে এই পাখিদের ছবি তুলতে লাগলেন। দলের অন্যরাও সবাই ঘুরে ঘুরে পুরো চর প্রদক্ষিণ করে নিই একবার। তখনো পর্যন্ত ফরিদী ভাই তার চোঙ্গা সাইজের জুম লেন্স লাগিয়ে একের পর ছবি তুলে যাচ্ছেন। দ্বীপ প্রদক্ষিণ শেষ করে আবার আমরা নৌকায় উঠে রওনা দেই মূল গন্তব্যে। চলতে থাকে নৌকা, সেই সঙ্গে ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী নুমান ভাই ভেতরে বসে ক্যামেরায় পাখির ছবিগুলোর ফোকাস চেক করছিলেন। তাকে চারপাশে ঘিরে সবাই বসে আছে। মায়াদ্বীপ পৌঁছাতে আমাদের আর বেশি সময় লাগেনি। দুপুর সাড়ে বারোটার মধ্যে পৌঁছে যাই। গন্তব্য এখানেই। তাই বাকি দিন এখানে কাটানোর জন্য আমরা প্রস্তুত হতে থাকি। মেঘলা আবহাওয়া আর তার সঙ্গে মৃদু বাতাস। ছায়া মাখা মায়াদ্বীপ যেন একটা মায়াপুরীতে পরিণত হয়েছে। দলনেতা শাহীন ভাই খেলাধুলার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকা থেকে সকলকে নামতে নির্দেশ দিলেন। প্রথমেই আমরা আয়োজন করি স্থানীয় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে দৌড় প্রতিযোগিতা। মোরগ লড়াই এবং শেষে বিজয়ীদের মধ্যে শুভেচ্ছা পুরস্কার বিতরণী। এসব পুরস্কারের মধ্যে ছিল নতুন টাকার নোট, খাতা-কলম এবং সবার জন্য সান্তনা পুরস্কার চকোলেট।



পল্লীভ্রমণ
খেলাধুলা শেষ করে সেখানকার পুরো  গ্রামটি ঘুরে দেকি। একটি বাড়িতে দুপুরে খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে আবার বেরিয়ে পড়ি গ্রামের পথে। সেই সঙ্গে ফুরিয়ে যাওয়া পানির বোতলগুলো টিউবওয়েল থেকে আবার রিচার্জ করে নিই। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের সংগ্রামী মানুষগুলো তাদের জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়ে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছে পুরো মায়াদ্বীপ। গ্রামে টিউবওয়েল, ফল ফসলের গাছ, সবজিবাগান, গবাদিপশু, মসজিদ, প্রাথমিক স্কুল এইসব স্থাপনায় সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করছে তারা প্রতিনিয়ত। এতকিছুর পরেও এই এলাকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা যেন প্রতিদিন সংগ্রাম। পুরো দ্বীপ ঘুরে একটি নারকেল গাছ চোখে পড়ে। তাতে বেশ কিছু বাবুই পাখি বাসা তৈরি করেছে। ঠিক যেন মায়াদ্বীপের সংগ্রামী মানুষগুলোর মতোই তিলে তিলে গড়া বেঁচে থাকার আশ্রয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বছরের প্রথম দিনটি ফুরিয়ে যেতে থাকে। আর আমরাও মায়াদ্বীপের মায়া ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফের পথ ধরি।



যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক মিনিট পরপর বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায়। বাসে গিয়ে সোজা নামতে হবে সোনারগাঁওয়ে। তারপর সেখান থেকে ইজি বাইকে বৈদ্যের বাজার নেমে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে। সারাদিনের জন্য নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত। বন্দর এলাকা বৈদ্যের বাজারে প্রয়োজনীয় সকল কিছু কিনতে পাওয়া যায়।