Breaking

Sunday, April 14, 2019

ভারতীয় ভিসা আবেদনের বিস্তারিত নিয়ম

আপনারা যারা ভারত যেতে চাচ্ছেন টুরিস্ট হিসেবে তাদের প্রথম যে জিনিসটি জরুরি তা হল ভারতীয় ভিসা। ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসেসিং করার জন্য আপনারা হয়ত অনেকেই কোন এজেন্ট দিয়ে  ভিসার ফর্ম পুরন ও ভিসা ফি পরিশোধ করিয়ে থাকেন। এজন্য গুনতে হয় অতিরিক্ত খরচ। এছাড়া ফর্ম পুরনেও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে থাকে যেগুলো নিজে করলে এড়ানো সম্ভব। এখন আপনি কিন্তু কোন এজেন্টের সহায়তা ছাড়াই নিজে নিজেই করে ফেলতে পারেন ফর্ম পুরন থেকে শুরু করে জমাদান পর্যন্ত সকল কাজ।



আজ এখানে আমি আপনাদের ইন্ডিয়ান ভিসা পাওয়ার উপায় তথা ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন করার নিয়ম বিস্তারিত জানাবো। কিভাবে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করবেন ও এর জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে, কোথায়, কিভাবে আবদনপত্র জমা দিবেন ইত্যাদিসহ সবকিছু সাথে আমার নিজের আবেদন জমা দেয়ার অভিজ্ঞতা। আমি নিজে গতবছর ডিসেম্বরে আমার ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসেসিং আমি করিয়েছি। এছাড়া গতবছর এপ্রিলেও আমি আমার ভাইয়ের ভিসার সব কিছু রেডি করে দিয়েছি।
আপনারা যারা লেখা পড়তে পছন্দ করেন তারা এই লেখাটি পড়ুন। আমি নিজে আবার সামনের সপ্তাহে ভিসা আবেদন করব আর সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকে নতুন করে সব তথ্য দেয়ার জন্যই একটু অপেক্ষা করছি।

চলুন, প্রথমেই জেনে নেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপগুলো কি কি।

১. আবেদন ফর্ম রেডি করা (পুরণ করা, ছবি আর স্বাক্ষর দেয়া)
২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ
৩. ভিসা আবেদন ফি পরিশোধ করা
৪. ভিসা আবেদন জমা দেয়া
৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ বা ফেরত নেয়া।


মনে রাখবেন এখন কোন কেন্দ্রেই কোন ধরণের ভিসার জন্যই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ইটোকেন লাগে না।

ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আপনারা যারা জানেন কিভাবে কি করতে হয়, শুধু জানতে এসেছেন যে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে এখং এত বড় লেখা পড়ার সময় নেই তাদের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তাহলে চলুন এখন, যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা এক নজরে দেখে নিই। এখানে সব ডকুমেন্ট যে ক্রমে জমা দিতে হবে সেই ক্রম অনুযায়ী নিচে দেয়া হল। IVAC গেলেই দেখবেন উচ্চসরে বারবার বলা হবে যে এই ক্রমে কাগজ রেডি করুন।

  • পাসপোর্ট
  • এককপি ২x২ ইঞ্চি মাপের প্রিন্টেড ছবি ও আরেকটি সফট কপি (শুধু অনলাইন আবেদনের সময় লাগবে)
  • পুরনকৃত ফর্ম (প্রিন্টেড)
  • স্মার্ট কার্ড/এনআইডি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি
  • ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোন বিল)
  • পেশার প্রমাণপত্র (বেসরকারি চাকুরিজীবি হলে NOC, সরকারি চাকুরিজীবি হলে NOC/G.O>., ছাত্র হলে আইডি কার্ড বা বেতনের রশিদ, ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি, আর পেশা কৃষি হলে জমির খতিয়ানের ফটোকপি)
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ডলার এনডোর্সমেন্ট অথবা ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের কপি
  • পাসপোর্ট এর ডাটা পেইজের ফটোকপি (ছবির পাতা)
  • সর্বশেষ ইন্ডিয়ান ভিসার ফটোকপি (যদি থাকে)
  • অন্য কোন সাপোর্টিং কাগজ যদি দিতে চান।
  • পূর্ববর্তি সকল পাসপোর্ট। যদি পুরাতন পাসপোর্ট থাকে তাহলে অবশ্যই দিতে হবে। আর হারিয়ে গেলে জিডি কপি ও লস্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে।
সকল কাগজপত্রের মেইন কপি নিয়ে যাবেন, ওরা দেখতে চাইবে। না দেখাতে পারলে জমা নাও নিতে পারে। কাগজগুলো স্ট্যাপল করার দরকার নেই, ওরা বলে স্ট্যাপল করা থাকলে খুলে ফেলতে। আপনি চাইলে একটা ফাইলে সব নিতে পারেন।
এখানে শুধুমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হয়েছে। মেডিক্যাল, ট্রানজিট ও ব্যাবসা ভিসার জন্য প্রধান সব ডকুমেন্ট একই তবে আলাদা আলাদা কিছু ডকুমেন্ট লাগে। আপনারা IVAC এর হেল্পলাইন থেকে জেনে নিতে পারেন।

১. ভারতীয় ভিসার আবেদন ফরম প্রস্তুত করা

আবেদনপত্র পুরন করার আগে আপনার ছবির একটা সফট কপি লাগবে যেটা আপনাকে একেবারে শেষ ধাপে আপলোড করতে হবে। তাই আগে থেকেই রেডি রাখুন। ওদের মতে ”ডিজিটাল ছবি ও একটি রঙ্গীন ছবি (উভয় ছবিই একই হতে হবে এবং তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে তোলা হতে হবে।”

এখন ইন্ডিয়ান ভিসা ফরম পুরন করতে যান চলে এই লিংকে https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/index.html তারপর ‘Online Visa Application‘ লিংকে ক্লিক করে তথ্য পুরন করা শুরু করুন।
উপরের স্যাম্পল ফাইল দেখলেই বুঝবেন কি কি তথ্য কোথায় দিতে হবে। শুধু যেখানে ইন্ডিয়ার কোন রেফারেন্স চাইবে সেখানে যেকোন হোটেলের নাম ঠিকানা, টেলিফোন দিলেই হবে। গুগল ম্যাপে সার্চ দিলেই অনেক হোটেলের নাম পাবেন। একি ভাবে শেষের দিকে ভারতে কোন হোটেলে থাকবেন সেইরকম হোটেলের নাম চাইবে, সেখানেও সেইম হোটেলের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন দিন।

ভিসা ডিটেলস

আপনি কি ভিসা চাচ্ছেন, কত মাসের জন্য, এন্ট্রি সংখ্যা ও  সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন হল পোর্ট সিলেকশন অংশ।
আপনাকে একেবারে প্রথম দিকেই ‘Visa Type’ সিলেক্ট করতে হবে। আপনি যেহেতু টুরিস্ট হিসেবে যাচ্ছেন সেহেতু ‘TOURIST VISA’ সিলেক্ট করুন।
কত মাসের ভিসা চাচ্ছেন এখানে আপনি ৩, ৬, ১২ আপনার যেটা দরকার সেটা দিতে পারেন। তবে ১২ দেয়াই ভাল, কেননা ওরা চাইলে ১২ বদলে ৬ মাস দিতে পারে। কিন্তু আপনি ৩ মাস চাইলে তো আর ওরা ৬ মাস দিবে না।
No of Entries অপশনে আপনি কতবার ভারতে প্রবেশ করতে চান সেটা দিবেন। আপনি SINGLE অথবা MULTIPLE যেতা দরকার দিতে পারেন। তবে ভিসার মেয়াদের মাঝে একাধিকবার যেতে চাইলে MULTIPLE দিবেন।
সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন অংশ হল পোর্ট সিলেকশন। মানে যাওয়া আসার জন্য কোন পোর্ট সিলেক্ট করবেন। যেমন ধরুন আমাদের দেশে ৩ টা পোর্ট খুবই জনপ্রিয়। হরিদাসপুর/বেনাপোল, ডাউকি/তামাবিল ও চ্যাংড়াবান্ধা/বুড়িমারি। যারা শিলং যেতে চান তারা BY ROAD DAWKI, যারা দার্জিলিং যেতে চান তারা Changrabandha ও যারা কলকাতা বা কলকাতা হয়ে ইন্ডিয়ার অন্য শহর যাবেন তারা Haridaspur সিলেক্ট করবেন। এখন আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে আপনার যেকোন পোর্টের ইন্ডিয়ার ভিসা থাকলেই আপনি ইন্ডিয়ার যেকোন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে, Haridaspur দিয়ে গাড়িতে ও Gede দিয়ে রেলে যেতে পারবেন। তাই আমার মতে আপনি প্রিফারেন্সের ভিত্তিতে অন্য যেকোন পোর্ট সিলেক্ট করতে পারেন কেননা আপনি Haridaspur by Road, Gede by Rail and AIR তো ফ্রি পাচ্ছেনই এর সাথে। তাই আমি আমার বেলায় ‘BY ROAD DAWKI’ সিলেক্ট করেছিলাম। আশা করি বুঝতে পারছেন।
সবার শেষে ছবি আপলোড করে ফর্মটি প্রিন্ট করে নিন।
এখন এক কপি ২x২ ইঞ্চি মাপের ওই একই ছবির একটি ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিন।
এখন ছবির ঠিক নিচের বক্সে ও ২য় পেইজের নিচে ডান দিকে পাসপোর্টের মত স্বাক্ষর করুন।
ব্যাস হয়ে গেল ফর্ম রেডি।

মনে রাখবেন

  • ফর্ম পুরন শুরু করার পর ওরা একটা Temporary ID দিবে। এইটা সেইভ করে রাখুন। কারন কোন কারণে সার্ভারে সমস্যা থাকলে বা আপনি বাকি অংশ পরে পুরন করতে চাইলে এই লিংকে গিয়ে ‘Complete Partially Filled
    Form’ এ ক্লিক করে Temporary ID ও ক্যাপচা দিয়ে আবার আগের জায়গা থেকে শুরু করতে পারেবেন।
  • ফর্ম সম্পুর্ন পুরন হয়ে গেলে আর নিজে এডিট করতে পারবেন না। তবে আবেদন কেন্দ্রে গেলে ওরা ঠিক করে দিবে, কিন্তু ফি ৩০০ টাকা।
  • ফর্ম পুরন করার পর ৮ দিনের মাঝে জমা দিতে হবে, না হলে এক্সপায়ার হয়ে যাবে।
  • জরুরি তথ্যগুলো সতর্কতার সাথে, পাসপোর্ট দেখে পুরন করুন। যেমন নামের বানান, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নাম্বার ও অন্যান্য তথ্য।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ

যেসব কাগজপত্র পাসপোর্ট ও ফর্মের সাথে দিতে হবে তা উপরে সংক্ষপে বলা হয়েছে। এখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হল। আপনি অফিয়াল ওয়েবসাইট হতেও দেখে নিতে পারেন এখান থেকে। তবে এখানে আমি সহজে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।



পাসপোর্ট

বিদেশ ভ্রমনের নাম নিলেই যেটি সবার আগে লাগবে সেটি হচ্ছে পাসপোর্ট। তাই পাসপোর্ট না থাকলে পাসপোর্ট করে নিন। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে-
  • আবেদনের দিন থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে
  • পাসপোর্টে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে
  • যদি আপনার পুরোনো পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সেইগুলো পাসপোর্ট এর সাথে দিতে হবে। আর যদি পুরোনো পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে জিডি কপি ও লস্ট সার্টিফিকেট কপি দিতে হবে

স্মার্ট কার্ড/এনআইডি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি

এর যেকোন একটা হলেই হবে। এইগুলা দ্বারা দেখা হয় যে আপনি এই দেশের নাগরিক, এছাড়া স্থায়ী ঠিকানা প্রমানের জন্যও এটা দরকার। ফর্মে স্থায়ী ঠিকানা এ অনুযায়ী পুরন করবেন।

ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি

গত তিনমাসের, Paid অথবা Unpaid বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোন বিলের ফটোকপি। এর সাথে শুধুমাত্র আপনার বর্তমান ঠিকানার মিল থাকতে হবে। হুবুহু, মিল থাকতে হবে এমন হয়, তবে ঝামেলা এড়াতে এটা দেখেই ফর্ম পুরন করা উচিৎ। আর এ বিল আপনার নামে হতে হবে না।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট

আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণের জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট লাগবে।
ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ  একাউন্টে কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা রেখে গত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিন। অনলাইন কপি হলে হবে না, ব্যংকে সিল ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। আর ভিসা আবেদন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যালেন্স বজায় রাখুন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর ফটোকপি না দিয়ে, মেইন কপিই দিয়ে দিতে পারেন। আপনার নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট না থাকলে আপনি আপনার বাবা-মায়ের ব্যাংক স্টেটমেন্টও ব্যাবহার করতে পারেন।
ডলার এনডোর্সমেন্টঃ এখন থেকে মানি এক্সচেঞ্জ এর ডলার এনডোর্সমেন্ট IVAC গ্রহণ করে না। তাই আপনাকে কোন তফসিলি ব্যাংক মানে সরকারি, বেসরকারি যেকোন ব্যাংক থেকে ১৫০ ডলার এনডোর্স করতে হবে। তবে আপনি ২০০ করাতে পারেন। আর অবশ্যই এনডোর্সমেন্ট এর পেপার এর কপি জমা দিতে হবে, শুধু পাসপোর্টে এনডোর্স করালে হবে না। এনডোর্সমেন্ট এর পেপার বর্ডারে লাগতে পারে তাই কপি বা মেইন কপি সংরক্ষণ করুন।
আপডেটঃ আপনাদের জন্য সুখবর হচ্ছে এখন আইভিএসি ঢাকা ও আইভিএসি চট্টগ্রামে সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকাল ৪.০০ টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কার্ড এবং ডলার এন্ডোর্স্মেন্ট করতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড  বা ট্রাভেল কার্ডঃ   আপনার যদি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে, ব্যাংক আপনার পাসপোর্টে এন্ডোর্সমেন্ট এরিয়াতে এন্ডোর্স করে দিবে। আর ভিসা আবেদন করার জন্য এই এন্ডোর্সমেন্ট পেইজের ফটোকপি ও কার্ডের দুই পাশের ফটোকপি জমা দিতে হবে। তবে আপনি চাইলে নিরাপত্তার জন্য কার্ডের মাঝের ৪ ডিজিট ব্লক করে দিতে পারেন।
এছাড়া অনেক ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কার্ড ইস্যু করে যেমন, ইবিএল একুয়া কার্ড, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ট্রাভেল কার্ড ইত্যাদি। এইগুলার ক্ষেত্রেও একই ভাবে এন্ডোর্সমেন্ট পেইজের ফটোকপি ও কার্ডের দুই পাশের ফটোকপি জমা দিতে হবে।

পেশার প্রমাণপত্র

আপনি ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা বেতনের রশিদ এর ফটোকপি।
চাকুরীজীবী হলে NOC (No Objection Certificate)
আর ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি দিবেন।
ফ্রিল্যান্সার হলে যে প্লাটফর্মে কাজ করেন সেখান থেকে কিছু দিতে পারেন। যেমন ধরুন প্রোফাইলের প্রিন্ট, আর্নিং হিস্টোরি। আর যারা Upwork এর কাজ করেন তারা ‘Certificate of Earnings’ দিতে পারেন। যেকোন দেশের ভিসা আবেদনে ইহা ওষুধের মত কাজ করে।  ইন্ডিয়ান ভিসা ফর্মে পেশা হিসেবে Freelancer অপশন আছে।

অন্যান্য

আর অন্য কোন কাগজ যদি দিতে চান তাহলে আপনি দিতে পারেন। তবে আবশ্যিক কিছু না।

৩. ভিসা আবেদন ফি পরিশোধ করা

ইন্ডিয়ান ভিসার নতুন নিয়ম ২০১৮ অনুযায়ী ৫ আগস্ট ২০১৮ থেকে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি সকল কেন্দ্রের জন্য ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে । ইন্ডিয়ান ভিসা আপনি দুইভাবে জমা দিতে পারেন।
  • আপনি নিজে
  • এজেন্ট দ্বারা
তবে যেভাবেই ফি দিন না কেন একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন ভিসা ফি পেমেন্ট করার পর ৩ দিনের মাঝেই ফর্ম জমা দিতে হবে। না দিলে পেমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে এবং আবার ফি পে করতে হবে। 

নিজে নিজে

ইন্ডিয়ান ভিসা ফি জমা দেয়া এখন খুবই সহজ। আপনি নিজে ঘরে বসে ইন্ডিয়ান ভিসা ফি জমা দিতে পারেন। এর জন্য এই লিংকে গিয়ে বিস্তারিত পুরন করে বিভিন্ন পেমেন্ট অপশনের যেকোন একটা দিয়ে পে করতে পারবেন। পেমেন্ট অপশন গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিকাশ, রকেট, DBBL Nexus, দেশি বিদেশি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ইত্যাদি। কিভাবে পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করবেন তার জন্য IVAC বিস্তারিত একটা ম্যানুয়াল রেডি করে রেখেছে, সেটা দেখুন এখানে। ৮০০ টাকা ফি আর পেমেন্ট চার্জসহ ৮২৪ লাগবে।

এজেন্ট দ্বারা

এখন আপনি যদি নিজে ফি দিতে না চান, তাহলে ভিসা আবেদন কেন্দ্রের আশেপাশে অনেক দোকান পাবেন যারা ফি জমা দিয়ে দেয়। আর এজেন্টরা ৫০ থেকে ১০০ টাকাও বেশি নিবে।
যেভাবেই পেমেন্ট দিন না কেন আপনার ফোন নাম্বারে একটা মেসেজ আসবে। কোন প্রিন্ট আউট বা মেসেজ দেখানোর দরকার পরে না, যদি না পেমেন্ট নিয়ে কোন সমস্যা হয়। আপনি শুধু নিজে একবার এই লিংক থেকে চেক করে নিবেনন যে আপনার আবেদনের ফি সঠিকভাবে জমা পড়েছে কিনা। লিংকে ক্লিক করার পর উপরে ডান দিকে ‘CHECK PAYMENT STATUS’ এ ক্লিক করে আপনার WEB FILE NUMBER, Passport No আর ক্যপাচা পুরন করে দেখে নিন আপডেট। এখানে ঠিক দেখালে আর কিছু কোন চিন্তা নেই। এখন জমা দিতে চলে যান।
WEB FILE NUMBER কি তা দেখুন নিচের ছবিতে।
Indian Visa WEB FILE NUMBER
WEB FILE NUMBER

৪. ভিসা আবেদন জমা দেয়া

ভিসা ফি জমা দেয়া হয়ে গেলে এখন আপনাকে ভিসা আবেদন কোন Indian Visa Application Center (IVAC) বা ‘ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক)’ – এ জমা দিতে হবে। এখন কোন কেন্দ্রেই কোন ধরণের ভিসার জন্যই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ইটোকেন লাগে না।
এখন ঢাকাতে শুধুমাত্র একটাই আইভ্যাক । উত্তরা, মতিঝিল ,গুলশান, শ্যামলী সব কেন্দ্র সরিয়ে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন   অফিসিয়াল নাম আইভিএসি, ঢাকা ( জেএফপি ) যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক-এ অবস্থিত। বিস্তারিত নিচে
ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র, ঢাকা  (জেএফপি)
জি – এক , দক্ষিণ কোর্ট, যমুনা ফিউচার পার্ক, প্রগতি শরণী, বারিধারা, ঢাকা -২২২9, বাংলাদেশ .
Hot Line: 09612 333 666
Website: www.ivacbd.com
আমার আইভিএসি জেএফপি -যমুনা ফিউচার পার্ক কেন্দ্রে জমা দেয়ার অভিজ্ঞতা নিচে দেয়া হল।
আমি ২য় বারের মত ভিসা আবেদন জমা দিয়েছিলাম আইভিএসি জেএফপি -যমুনা ফিউচার পার্ক কেন্দ্রে এ বছর জানুয়ারির ১৩ তারিখে।
এখন তো কোন কেন্দ্রেই কোন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ইটোকেন লাগে না, সব কিছু রেডি করে একদিন গেলেই হয়। য়ার এখন এখানে আগের মিরপুর রোডের মত ভীড়ো নাই। ৫০ টার মত কাউন্টার আছে। যেখানে টুরিস্ট ভিসা জমা নেয়ার কাউন্টারই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বিজনেস, ট্রাঞ্জিট, স্টুডেন্ট ও অন্যান্য ভিসার জন্য আলাদা কাউন্টার আছে। তাই ৩০ মিনিতের বেশি সময় লাগবে না এখন জমা দিতে।
প্রথমেই শপিং মলের ভিতর ঢুকলেই কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে কোথায় জমা দিতে হবে। প্রথমে লাইন ধরে চেক করে ভেতরে ঠুকতে হবে, এর পর গেটের কাছাকাছি গেলে কি ধরনের ভিসা আবেদন করবেন সে অনুযায়ী প্রিন্ট করা সিরিয়াল টোকেন দিবে যেটা নিয়ে আপনাকে ভেতরের রুমে গিয়ে বসতে হবে। এখানে গেলেই দেখবেন ওদের টোকেন-ডিস্প্লেতে কাউন্টার ও সিরিয়াল দেখাবে।
এর মাঝে ওরা আপনাকে বলবে যে কিভাবে আবেদনপত্রের সব কাগজগুলো সাজাবেন। এরপর আপনার সিরিয়াল আসলে কাউন্টারে গেলে একজন এক্সিকিউটিভ সব চেক করবেন, আপনার সব ডকুমেন্টের মুল কপি দেখতে চাইতে পারেন। আপনি কি করেন, ব্যংক স্টেটমেন্ট কার, কেন ইন্ডিয়া যাবেন এই টাইপের কিছু প্রশ্ন করতে পারে। এরপর সব ঠিক থাকলে আপনাকে একটা রশিদে স্বাক্ষর করে, আরেকটা রশিদ দেয়া হবে। এই রশিদ দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত নিতে হবে। তাই যত্ন করে রাখুন।
এই ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কিছু বিষয়।
  • ভিসা আবেদন সকাল ৯ঃ০০ থেকে ২ঃ০০ পর্যন্ত নেয়া হয়। আর ৩ঃ০০ থেকে ৬ টায় পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়।
  • এখানে কোন দালাল নেই কারণ কোন লাইন নেই।
  • ভিতরে ফটোকপি ও প্রিন্টের ব্যবস্থা আছে।
  • কফির ব্যবস্থা আছে, ২৫ টাকা প্রতি কাপ।
  • ভেতরে ফোনে কথাবলা নিষেধ, তবে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, হেডফোনে গান শুনতে পারেন। প্রধান কথা ভেতরে ফোনে কথা বলবেন না।
  • ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢোকা যাবে না। তবে ঢোকার আগে টাকা দিয়ে ব্যাগ জমা রেখে যেতে পারেন। ওরা একটা টোকেন দিবে।
  • ৬৫ বছরের উর্ধের ‘Senior Citizen’ দের কোন লাইনে দাড়াতে হবে না, আর তাদের জন্য আলাদা কাউন্টারও আছে।
  • কেউ তার পরিবারের সদস্যদের আবেদন একসাথে জমা দিতে পারেন। যেমন কেউ তার স্ত্রী-সন্তান, ও বাবা-মা’র আবেদন নিজে জমা দিতে পারবেন। আবার কোন মহিলা, তার স্বামী ও সন্তানদের আবেদন জমা দিতে পারবেন। এজন্য যে জমা দিবে তার নিজের পাসপোর্টের কপি সব আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।

৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ করা

আপনি ভিসা আবেদন জমা দেয়ার সময় আপনাকে একটি প্রাপ্তি রশিদ দেয়া হবে যাতে আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, Web File No, ভিসা আবেদন ফি ইত্যাদিসহ একটা তারিখ দেয়া থাকবে। তারিখটি এভাবে দেয়া থাকে  ‘Delivery on or after: 2017-12-17’. এর মানে আপনি উল্লিখিত তারিখ বা এর পর যেকোনদিন নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে পারবেন। যদি অনলাইনে রশিদে উল্লিখিত তারিখের আগেই পাসপোর্ট রেডি দেখায় তাতেও আগে দিবে না।  আর সব সময় যে রশিদে উল্লিখিত সময়েই পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হবে এমন কিন্তু নয়, অনেক সময় দেরিও হতে পারে। তাই আপনি আইভ্যাকে যাওয়ার আগে চেক করে নিন যে আপনার আবেদনের কি অবস্থা। সাধারণত ওরা আগেই এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত। এছাড়া আপনি আইভ্যাকের ওয়েবসাইটে আপনার ভিসার আবেদন ট্র্যাক করতে পারেন। এজন্য আপনাকে যেতে হবে এই ঠিকানায়, এরপর আপনি যেই সেন্টারে আপনার আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন তা সিলেক্ট করুন।

এখন নিচের দেখানো বক্সে ‘Web file Number’ দিয়ে সাবমিট করুন। এখন আপনি আপনার ভিসা আবেদণের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।

এই IVAC ৩:০০ থেকে ৬:০০ পর্যন্ত পাসপোর্ট ডেলিভারি দিয়ে থাকে। নিচের ছবিটি দেখুন, এটি আমাকে দেয়া হয়েছিল ফর্ম জমা দেয়ার পর।
IVAC Dhaka Receipt
IVAC Receipt
ভিসা জমা দেয়ার জন্য সকালে যেটুকু ভীড় হয় তার চেয়ে পাসপোর্ট নিতে বেশি বড় লাইন হয়। তবে আশার কথা পাসপোর্ট নিতে বেশি সময় লাগে না তাই দ্রুতই লাইন শেষ হয়। পাসপোর্ট ডেলিভারির সময় তারা কোন কথা বলবে না, শুধু রশিদ দিবেন আর পাসপোর্ট নিবেন।
আর একটা কথা রশিদ যত্ন করে রাখুন, কারণ হারিয়ে গেলে অনেক ঝামেলা হবে। জিডী করতে হবে ও এর পরেও কাগজপত্র লাগে। তাই সাবধান!
তো আপনার পাসপোর্ট নিয়ে নিন, আর চেক করে দেখুন ভিসা পেয়েছেন কিনা। ভিসা পেলে একটা পেইজে নিচের মত ভিসা লাগানো দেখবেন।
ইন্ডিয়ান ভিসা
ইন্ডিয়ান ভিসা
আমি প্রথমবার ১২ মাসের এপ্লাই করেছিলাম, কিন্তু ওরা ৬ মাসের ভিসা দিয়েছে (উপরের ছবিতে)। আর এইবার জানুয়ারী ২০১৮ তে ট্রানজিট ভিসা নিয়ে ঘুরে এলাম ভুটান। তো ঘুরে আসুন ইন্ডিয়া আর এসে লিখে ফেলুন আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। 


আর ভিসা না পেলে পেইজে কিছুই থাকবে না, মানে পাসপোর্ট যেমন জমা দিয়েছেন সেরকমই ফেরত পাবেন। Bad luck :-(. আবার চেষ্টা করুন ভাই।
আশা করি ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। তারপরেও আরো কোন প্রশ্ন থাকলে করুন। আমি উত্তর দিব। প্রশ্নের জন্য সাইটের মেইন কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করলে আমার কাছে ইমেইলে নোটিফিকেশনে আসবে তাই দ্রুত উত্তর দিতে পারব। আর ফেসবুক কমেন্ট করলে আমাকে ম্যানুয়্যালি চেক করতে হয়, তাই একটু দেরি হতে পারে।
আর আপনার কাছে যদি আপডেট তথ্য থাকে  অথবা কোন তথ্য ভুল মনে হয় তাহলে দয়া করে কমেন্ট করে জানান, আমি আপডেট করব। এতে সবারই উপকার হবে। আমি প্রপার ক্রেডিট দেয়ার চেষ্টা করব।
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

No comments:

Post a Comment